কালেমা তাইয়্যেবা

কালেমা তাইয়্যেবা হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)” যার বাংলা অর্থ হচ্ছে “আল্লাহ্‌ ব্যাতীত কোন ইলাহ(উপাস্য) নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং হযরত মোহাম্মাদ (সা.) তার প্রেরিত রাসুল”

কালেমা তাইয়্যেবার অংশ

এই পবিত্র কালেমার দু’টো অংশ রয়েছে। আর তা হলো,

প্রথম অংশ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই তিনিই একমাত্র পালনকর্তা, মাবুদ, প্রভু, মালিক, তিনি সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা আমরা সবাই তাঁরই সৃষ্টি, তিনি সকলের প্রভু, আমরা সবাই তাঁর দাস/গোলাম। তিনিই আমাদের একমাত্র উপাস্য, আমরা তাঁরই দাসত্ব স্বীকার করে, কেবল তাঁরই আনুগত্য করি এবং তাঁরই আইন মেনে চলার চেষ্টা করি। কালামেপাকে বর্ণিত আছে যে, ”তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশ জমিন ও পৃথিবী এবং এই দু’টোর মাঝে যা কিছু আছে, তাহা সবই ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন”। (সূরা সাজদাহ, আয়াত-৪)
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের মা’বুদ তিনি, একমাত্র মা’বুদ; তিনি ছাড়া আর কেহ মা’বুদ নাই; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু”। (আল-কোরআন, সূরা বাকারা আয়াত-৩৬)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তিনিই তোমাদের আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া আর কেহ মা’বুদ নাই। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা, অতএব তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত কর। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের দায়িত্বশীল।” (সূরা আনআম, আয়াত-১০২)

অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “হে মানব সমাজ! তোমরা ভিন্ন ভিন্ন ও একাধিক উপাস্য স্বীকার করা ভাল না, একজন প্রকৃত শক্তিমান মা’বুদই ভাল জেনে রাখ, এক আল্লাহ ব্যতীত তোমরা অন্য যে মা’বুদের নামে ইবাদত কর তাহা সবই অর্থহীন, আর সেই নামগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা মিলিয়ে রেখেছ। আল্লাহ সে সম্পর্কে কোন যুক্তি প্রমাণ নাজিল করেন না। অথচ হুকুম দেওয়া ও আইন রচনা করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কাহারও নাই তিনি আদেশ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহারো দাসত্ব করিও না। এটিই সত্য দ্বীন, কিন্তু অনেকেই তাহা জানে না”।

দ্বিতীয় অংশ: মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ অর্থ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে তাঁর আদর্শ প্রচারের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এই কালেমা যেহেতু ইসলামের মূল ভিত্তি/বুনিয়াদ, এর উপর ইসলামের অন্যসব হুকুম-আহকাম ইমারত স্বরূপ দাঁড়ানো আছে। এই কালেমার মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার যে পরিচয় দেয়া হয়েছে তাই আল্লাহর সঠিক পরিচয়। আর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেবল মাত্র একজন মানুষই নয়, বরং তিনি আল্লাহর রাসূলও বটে, আর এটা তাঁর আসল পরিচয়। আর আল্লাহকে ভালবাসতে হলে প্রথমেই তাঁর বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে ভালবাসতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল ! আপনি বলেদিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তবে প্রথমেই রাসূলের অনুসরণ করো তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।” (সূরা আল ইমরান)

আল্লাহর আইন অনুসরণ করার লক্ষ্যে তিনি মহানবী (সাঃ) কে রাসূল মনোনীত করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, কাজেই আমরা মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথে তাঁর সব আইন-কানুন, বিধি-বিধান মেনে, তাঁর অনুসরণে জীবন যাপন করলে এই কালেমার হক আদায় হবে, নচেৎ তার বিপরীত হলে তাকে অমান্য করারই নামান্তর

হে মুহাম্মাদ! আপনার পূর্বে আমি যত নবী পাঠায়েছি, তাঁদের সকলের প্রতি ওহী যোগে এই আদেশ করেছি যে, আমি ব্যতীত আর কেহ ইলাহ নাই, অতএব তোমরা সকলে কেবল মাত্র দাসত্ব কর। (সূরা আম্বিয়া-২৫)

কালেমা তাইয়্যেবার শিক্ষা

  • কালেমা তাইয়েবা শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে হবে।
  • কালেমার শাব্দিক অর্থ জানতে হবে।
  • কালেমার মর্মকথা বুঝতে হবে।
  • কালেমার ওয়াদা পালন করতে হবে।

কালেমা তাইয়্যেবা একটি বিরাট বিপ্লবী ঘোষণা। যারা এই কালেমা গ্রহণ করে, তারা একমাত্র আল্লাহর উপাশন ও তারই দাসত্ব স্বীকার করে। যেমন- আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর তার নৈকট্য লাভের উপায় তালাশ কর এবং আল্লাহর পথে জিহাদ কর, আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে।’  (সূরা মায়িদাহ, আয়াত-৩৫)

বস্তুত এই কালেমা তাইয়্যেবার প্রতি যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তারা ইসলামী বিধান ব্যতীত অন্য কোন ইজম স্বীকার করতে পারে না। আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাহারো সার্বভৌমত্ব মানতে পারে না। ইসলামী রাষ্ট্রে ও মুসলিম দেশে মানব রচিত কোন আইন চলতে পারে না। তাই যে কোন ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলাম ও কুরআন বিরোধী যে কোন নেতা/রাজশক্তির স্বরচিত আইন চলতে পারে না।

কালেমার পরিপূর্ণতা

হযরত আদম আঃ থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাঃ পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের পরে যে আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে, তা বিশ্বাস করা ফরজ। কালেমার প্রথম অংশ ‘লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ মানা যেমন-ফরজ, কালেমার শেষ অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলল্লাহ মানাও তেমন ফরজ। বর্তমান বিশ্বে সুখ-শান্তির জন্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আইন/বিধান এবং মুহাম্মাদ সাঃ আদর্শ জীবন বিধানকে মেনে নেয়া ছাড়া অন্যকোন উপায় নেই। আল্লাহর কোরআন যেমন অপরিবর্তীত, তেমন রাসূল সাঃ’র আদর্শ চরিত্র অলঙ্গনীয়। মুসলমানদের জন্য চিরন্তন আদর্শ নেতা হলেন মুহাম্মাদ সাঃ।

কালেমা তাইয়্যেবা পাঠের ফজিলত

কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করার ফলে পাঠকারীর জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি তার মাঝে গুনাহ না থাকে, তবে তার পরিবারবর্গের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তাফসিরে রুহুল বয়ানে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাঃ’র যুগে দাহিয়া কালবী নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে বিনা অপরাধে ৭০ জন মেয়ে সন্তানকে হত্যা করেছে। রাসূল সাঃ’র পরামর্শে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করে মুসলমান হলে তার ৬০ বছর বয়সের সমস্ত গুনা মাফ করে দেয়া হয়। হযরত আনাছ রাঃ হতে বর্ণিত আছে যে, যে কোন ব্যক্তি দিনে/রাতে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করবে সঙ্গে সঙ্গে তার আমল নামা থেকে সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে। আর তার গুনাহ সমপরিমাণ নেক তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করে দেয়া হবে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেন, একবার হযরত মুসা আঃ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন যে, হে আল্লাহ! আমাকে এমন একটি কালেমা শিক্ষা দিন, যাহা দ্বারা আমি একান্তে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বললেন, হে মুসা! তুমি পড় ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’। তখন মুসা (আঃ) বললেন, হে আল্লাহ! এটি এমন একটি কালেমা যা সবাই জানে। তখন আল্লাহ বললেন, হে মুসা! এটি এমন একটি কালেমা যা সপ্ত আকাশ ও সপ্ত জমিনের চেয়ে অতি ভারী ও বিশেষ সম্মানিত।

উদাহরণ

পানি একটি শব্দ। কিন্তু শব্দটিতে পানি নেই। পানি একটা জিনিস যা এ শব্দ দ্বারা বুঝা যায়। পিপাসা দূর করতে হলে পানি পান করতে হবে। পানি পানি জপলে পিপসা আরও বাড়বে । কারণ পানি শব্দে কোন পানি নেই। তেমনি কালেমায়ে তাইয়েবার শব্দগুলো কালেমা তাইয়েবা নয়। এর মর্মকথাটাই আসল কালেমা।

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পাঠ করে সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেকের ওপর ফরজ।