অন্যকে ভালো কাজের কথা বলে নিজে না করলে তার শাস্তি কি?


আল্লাহ তাআলা মানুষকে ভালো কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একে অন্যকে ভালো কাজে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পূণ্যশীলতা ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)

যখন কোনো বান্দা নিজে ভালো কাজ করার পাশাপাশি অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তখন আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
‘একজন মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তার সাহায্যে হাত বাড়িয়ে রাখেন।’ (মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিজি)

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি (লোকদেরকে) ভালো কাজের উপদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে কিন্তু নিজেরাই উপদেশ অনুযায়ী ভালো কাজ করে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত হয় না, তাদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা লোকদেরকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল; কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করতে থাক। তোমরা কি বিচার-বুদ্ধিকে কোনো কাজেই লাগাও না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)

অন্য আয়াতে মুমিনদেরকে উপদেশ প্রদান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেন এমন কথা বল, যা তোমরা নিজেরাই মেনে চল না? তোমরা যা করনা, তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক।’ (সুরা সফ : আয়াত ২-৩)

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের এমন কাজ করা উচিত, যা তারা নিজেরা পালন করবে এবং অন্যকে পালন করার উপদেশ প্রদান করবে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আুলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নেক আমল না করে অন্যকে তা করতে বললে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। এর ফলে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে আসবে। সে এটা নিয়ে বার বার চক্কর দিতে থাকবে, যেভাবে গাধা চক্রের মধ্যে বারবার ঘুরতে থাকে।

দোজখীরা তার চারপাশে জড়ো হয়ে জিজ্ঞাসা করবে, হে (অমুক) লোক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি লোকদেরকে সৎ কাজের আদেশ দিতে না এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলতে না?

জবাবে সে বলবে, ‘হ্যাঁ’ আমি সৎ কাজের আদেশ দিতাম কিন্তু আমি নিজে তা পালন করতাম না। আমি অন্যদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতাম কিন্তু আমি নিজে তা মানতাম না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, অন্যকে উপদেশ দেয়ার আগে সে উপদেশ নিজের মাঝে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এতে দু’টি উপকারিতা রয়েছে।
  1. একটি হলো- হাদিসে ঘোষিত কষ্ট বা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
  2. আর দ্বিতীয়টি হলো- নিজে আমল করার পাশাপাশি তা যদি অন্যকে করার জন্য বলা হয়, তবে তার নসিহত যথাযথ পালিত হবে। বা কোনো আমল করা হয় তা যথাযথভাবে সম্পাদন হবে। ওই ব্যক্তির এ নসিহত যথাযথ বাস্তবায়ন হবে।
সুতরাং নিজে আমল করার পাশাপাশি অন্যকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলে তাতে দুনিয়া ও পরকালে সফলতা লাভ করা সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। নেক আমলের পাশাপাশি অন্যদেরকে নেক আমলের নসিহত করার তাফিক দান করুন। আমিন।