বাংলাদেশে বিবাহে পালিত কিছু কুসংস্কার

বিবাহ মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। চারিত্রিক আত্মরক্ষার অনুপম হাতিয়ার। যুবক-যুবতীর চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিবাহ। যা প্রত্যেক মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। এ চাহিদা পূরণার্থেই ইসলামি শারিআত বিয়ের হুকুম আরোপ করেছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এই বিবাহে আমরা হরদম পাপকার্য করে যাচ্ছি, চলুন দেখে নেয়া যাক সে রকম কিছু কুসংস্কার মূলক কাজ। 

বিবাহে যে সকল কুসংস্কার পালন করা হয়

১. অনেক জায়গায় বিবাহে রওয়ানা হওয়ার আগে এলাকার প্রসিদ্ধ মাযার যিয়ারত করে তার পরে রওয়ানা হয়, শরীআতে এর কোন ভিত্তি নেই।

২. বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রে পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর জবরদস্তী করে আদায় করে থাকে। এভাবে জোর করে টাকা আদায় করা জায়েজ নাই।

৩. অনেক জায়গায় গেট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া হয় এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা গর্হিত কাজ। কেননা, বর হচ্ছে মেহমান আর মেহমানের যথোপযুক্ত মেহমানদারী করা ঈমানের আলামত। সেই মেহমান থেকে এভাবে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা নাজায়েজ।

৪. খাওয়া দাওয়া শেষ কনে পক্ষের লোকেরা বরের হাত ধোয়ায়। পরে হাত ধোয়ানো বাবদ তারা টাকা দাবী করে। অনেক জায়গায় এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এটা একেবারেই অনুচিত। মূলতঃ এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। দীর্ঘদিন যাবত হিন্দুদের সাথে বসবাস করার কারণে আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারগুলি অনুপ্রবেশ করেছে। বর পক্ষের লোকেরা তো মেহমান। মেহমানের কাছ থেকে এভাবে চাপ দিয়ে টাকা উসূল করা কি ভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে?

৫. বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে যৌতুকের বিভিন্ন জিনিষ- পত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটাও অন্যায় ও নির্লজ্জতার কাজ। কারণ একেতো যৌতুক নেয়া-দেয়া নাজায়েজ, তারপরে সেই নাজায়েজ কাজের আবার প্রদর্শনী!!

৬. বিবাহের পরে নারী-পুরুষ সকলের সামনে কনের পিতা জামাই- মেয়ের হাত একসাথে করে তাদেরকে দু‘আ দেয়। কনের পিতা জামাইকে বলে আমার মেয়েকে তোমার হাতে সোপে দিলাম। তুমি একে দেখে শুনে রেখ। এধরনের আরো কিছু কথা বলে। এর কোন ভিত্তি শরীআতে নেই। কেননা, জামাইকে কিছু নসীহত করতে হলে, তাকে যে কোন এক সময় বলা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে মাহরাম-গায়রে মাহরাম সকলের সামনে উভয়ের হাত এভাবে একসাথে করা বেপর্দা ও নির্লজ্জতা ছাড়া আর কিছু নয়।

৭. বিবাহ করে আনার পরে শ্বশুর বাড়ীতে বরবধূকে বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবলা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং নববধূর চেহারা সকলকে দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব করা জায়েজ নেই।

৮. অনেক জায়গায় মেয়ের বিয়ের আগের দিন আর কোথাও মেয়ে শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ- মিষ্টি ইত্যাদি পাঠানো হয়ে থাকে। কোথাও এটাকে চৌথি বলা হয়। এটাও বিজাতীয় নাজায়েজ প্রথা ছাড়া আর কিছু নয়।

৯. বর বা কনেকে কোলে করে গাড়ী বা পালকী থেকে নামিয়ে ঘরে তোলাও চরম অভদ্রতা বৈ কিছু নয়।

১০. ঈদের সময় মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে চাল আটা ময়দা পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার প্রথা অনেক জায়গায় আছে। আবার অনেক জায়গায় আনুষ্ঠানিক ভাবে জামাইকে এবং তার ভাই-বোনদেরকে কাপড় চোপড় দেয়ার প্রথা আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, ঋণ করে হলেও তা দিতে হয়। এটা শরীআতের সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়।