সামর্থ্য থাকলেই দিতে হবে কুরবানি

প্রায় দুই বছর ধরে মহামারি করোনায় কাঁপছে বিশ্ব। বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও করোনার আক্রমণে দিশেহারা। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরমরূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আমাদের দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও বড় বিপাকে পড়েছে। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে তারা। এরই মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। যাদের সামর্থ্য আছে তারা অবশ্যই কুরবানিতে অংশ নেবেন।

এমনটিও দেখা যাচ্ছে অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি না দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সামর্থ্যবানদের কুরবানি না দেওয়ার চিন্তা করা অবশ্যই ভুল। কেননা পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন; সামর্থ্যবানদেরকে অবশ্যই কুরবানি দিতে হবে। এটাই ইসলামের নির্দেশ ও শিক্ষা।

হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ঈদুল আজহা’ উপলক্ষে নিজেও কুরবানি করতেন এবং তার সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমকেও কুরবানি করার জন্য তাগিদ দিতেন।

আমরা জানি, ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানরা কতই না কষ্টের সম্মুখিন ছিলেন। তারপরও ঈদুল আজহার দিনে পশু কুরবানি করা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবারা বিরত থাকেননি। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেন এবং তিনি প্রতি বছরই ‘ঈদুল আজহা’ উপলক্ষ্যে মদিনায় কুরবানি করতেন।’ (তিরমিজি)

শুধু তাই নয়

ঈদুল আজহার কুরবানির প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এতদূর খেয়াল ছিল যে, ওফাতের আগে তিনি তাঁর জামাতা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওসিয়ত করেন, তাঁর ওফাতের পর যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সব সময় কুরবানি করা হয়। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাই করেছিলেন যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছিলেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঈদুল আজহার দিন মানুষের কোনো আমল আল্লাহ তাআলার কাছে কুরবানি করার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। কুরবানির পশু কেয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে। অর্থাৎ কুরবানিদাতা ওই জিনিসগুলোর বিনিময়ে সাওয়াব পাবেন। কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ তাআলার কাছে একটি বিশেষ স্থানে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা খুশি মনে কুরবানি করো। বেশি খরচ হয়ে গেলেও মন খারাপ করো না।’ (তিরমিজি)

করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা মনে করছি এ বছর কুরবানি দেব না, তারা অনেক বড় ভুল করবেন। সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই কুরবানিতে অংশ নিতে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানি করেনি, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (মুসনাদ আহমাদ)

তাই আসুন

আল্লাহ তাআলা যাদেরকে সামর্থ্য দিয়েছেন; তারা যেন কুরবানি দেয়ার বিষয়ে কোন বাহানা না করে কিংবা উপায় না খোঁজে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই হয়তো কুরবানি দিতে পারবেন না, তাদের প্রতিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

করোনাকালীন এ সময়ে আসন্ন ঈদুল আজহা ও কুরবানি সম্পাদন করে ঈদের আনন্দ গরীব-দুঃখী ও অসহায়দের প্রতি সামর্থ্যবানরা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। তাদের কাছে কুরবানির মাংস ও উপহার নিয়ে যাবেন, সাধ্যমতো তাদের খোঁজ-খবর নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।