অমুসলিমরা কি ভালো কাজের প্রতিদান পাবে?


যে কোনো ভালো কাজ কল্যাণ ও প্রশংসা বয়ে আনে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালো কাজের মূল্য পাওয়া যায়। ইসলাম সব সময় মানুষকে ভালো ও কল্যাণের কাজে করার আহ্বান জানায়। অন্যায় ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকতে উপদেশ দেয়। কিন্তু অমুসলিম ব্যক্তি যদি ভালো কাজ করে তার প্রতিদান কি সে পাবে? অমুসলিমের ভালো কাজ দেখলেই বা করণীয় কী? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

যেহেতু প্রত্যেক ভালো কাজেরই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। তাই আল্লাহ তাআলা মানুষকে ভালো কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান দিতে ঈমানকে শর্ত করে দিয়েছেন। মানুষের সব ভালো আমল বা কাজ তখনই উত্তম প্রতিদান পাবে, যখন আমলকারী হবে পরিপূর্ণ ঈমানদার। আর কেউ ঈমানদার না হয়; তবে সেও পাবে ভালো কাজের প্রতিদান।

আল্লাহ তাআলা অমুসলিমদেরও ভালো কাজের প্রতিদান দেবেন। তবে এ প্রতিদানের ধরন কেমন হবে; তাও হাদিসের বর্ণনায় সুস্পষ্ট। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট তথ্য তুলে ধরেছেন।

হাদিস

হজরত আবু বাকর ইবনু আবু শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একটি নেকির ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা কোনো মুমিন বান্দার প্রতি জুলুম করবেন না। বরং তিনি এর ফলাফল দুনিয়াতে দান করবেন এবং আখিরাতেও দান করবেন। আর কাফের (অবিশ্বাসী/অমুসলিম) ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর উদ্দেশে (মানুষের কল্যাণে) যে সৎ আমল (ভালো কাজ) করে এর প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে (দুনিয়াতে) জীবিকা নির্বাহ করাবেন। পরিশেষে পরকালে প্রতিফল দেওয়ার মতো তার কাছে কোনো সৎ আমলই থাকবে না।’ (মুসলিম)

হজরত আসিম ইবনু নাযর আত-তামিমি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফির (অবিশ্বাসী/অমুসলিম) যদি দুনিয়াতে কোন সৎ আমল (ভালো কাজ) করে তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকি (ভালো কাজ) আল্লাহ তাআলা পরকালের জন্য জমা করে রেখে দেন। আর (ইসলামের) আনুগত্যের প্রতিফলস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’ (মুসলিম)

তাই ভালা কাজ যেই করুক না কেন, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি ভালো কাজেরই প্রতিদান দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণে সব ভালো কাজের বিনিময় দেন অনেকগুণ। চাই সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম। উল্লেখিত হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।

শুধু তা-ই নয়

কেউ কারো জন্য ভালো কাজ দেখলে কী বলতে হবে; তাও এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। চাই সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক। শুকরিয়া, কৃতজ্ঞতা কিংবা দোয়া করা সম্পর্কিত হাদিসের সেই বর্ণনা কী?

মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক, কেউ কারো উপকার করলে কিংবা কেউ ভালো কাজে এগিয়ে আসলে তার জন্য হাদিসে দোয়া করার নির্দেশনা এসেছে। তাহলো-


অমুসলিম ব্যক্তির জন্য দোয়া

ভালো কাজ করা ব্যক্তি যদি অমুসলিম হয় তবে তার জন্যও রয়েছে ছোট্ট একটি দোয়া। তাহলো-

جَمَّلَكَ اللهُ

উচ্চারণ: ঝাম্মালাকাল্লাহ

অর্থ: আল্লাহ আপনাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন।

মুসলিম হলে

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহর যে কোনো ভালো কাজের বিনিময়ে এ দোয়া বলার নসিহত পেশ করেছেন-

جَزَاكَ اللهُ خَيْرًا

উচ্চারণ: ঝাযা-কাল্লা-হু খাইরান। (তিরমিজি)

অর্থ: আল্লাহ তাআলা আপনাকে (কাজের) উত্তম বদলা প্রতিদান করুন।

সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলাম সব মানুষের কল্যাণ কামনা করে। যে কারণে অমুসলিমের ভালো কাজের প্রতিদান ও স্বীকৃতিতে দুনিয়ায় রেখেছেন সুন্দর কর‌্যাণ ও উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা। আর মুমিন মুসলমান পরিপূর্ণ ঈমানের শর্তে পাবেন দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ।

সুতরাং মানব জাতির সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের উচিত, সত্যের পথে এগিয়ে আসা। সুন্দর কল্যাণময় জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুনিয়া ও পরকালের অসংখ্য নেয়ামত ও কল্যাণ লাভে নিজেকে তৈরি করা। ঈমানের নেয়ামত অর্জন করে নিজেদের ধন্য করা।

মনে রাখতে হবে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব মানুষকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যে উৎসাহ সবার জন্য অনুপ্রেরণা। তাহলো-

হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি কল্যাণমূলক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ ১০টি কল্যাণমূলক পুরস্কার; এমনকি আমি তা বাড়িয়ে দেব।

আর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ একটি মন্দ প্রতিদান অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চায় ও ভবিষ্যতে অন্যায় কাজ না করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে)

আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক বিঘত (আধা হাত) এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক হাত এগিয়ে আসব।

আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক বাহু (দুই বাহু সমান) এগিয়ে আসব।

আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে হেঁটে আসবে; আমি তার (কল্যাণের) দিকে দৌড়ে যাব।

আর যদি কেউ আমর সঙ্গে শিরক না করে (আমার সঙ্গে শরিক বা অংশীদার সাব্যস্ত না করে) পৃথিবীসম গোনাহ (পাপ) নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় (আমার কাছে ক্ষমা চায় ও তাওবাহ করে) তবে আমিও তার সামনে অনুরূপ (পৃথিবীসম) বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ গোটা মানব জাতিকে ইসলামের পতাকাতলে অবস্থান করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর আমল যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সব নেয়ামত ও কল্যাণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।